Male Oriental Magpie Robin; 2010; CKBS |
এই জানলায় আমার একটা স্লাইডিং (ঘষা) কাঁচের ব্যবস্থা আছে। তার একটা দিক খুলে রোজ গাছ দুটোয় জল দিই। বাকি দিনটা বন্ধই থাকে। সারাদিন আমরা দুজনেই অফিসে থাকি তাই ঘরটা বন্ধই থাকে। ওখানেই আমার AC র বাক্সোটাও আছে নিচের দিকে।
গত কয়েকদিন ঘরেই দেখি যেই সকালে জানলাটা ঠেলে খুলি একটা মেল দোয়েল ভ্যাবাচ্যাকা মুখে উড়ে যায়। আমি ভাবতাম বাসা করার প্ল্যান আছে নিশ্চই। কালকে, অর্থাৎ পয়লা মে ২০২২, সকালে জানলা খুলতে দেখি একটা মেল্ আর আরেকটা ফিমেল উড়ে আম গাছটায় গিয়ে বসল। তাদের মুখে দেখি খাবার ধরা। তাহলে কি বাক্সয় বাচ্চা আছে? তড়িঘড়ি জানলাটা বন্ধ করে পাশে মা'র ঘরের জানলা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম যে ওরা কি করছে।
প্রথমে কাউকেই দেখতে পেলাম না। খানিক পরে দেখলাম মেল টা পাশের বাড়ির একতলার ছাদে, যেখানে অনেক শুকনো পাতা পড়ে থাকে সেখান থেকে পোকা ধরছে। তারপর সে মুখে পোকা নিয়ে আম গাছের ডালে বসে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। বুঝলাম ও বাসায় ঢুকবে, তাই দেখে নিচ্ছে কেউ দেখছে কিনা এবং বুঝতে পারছে যে আমি দেখছি। আমি নিজেকে আড়াল করায় ও গিয়ে গ্রিলের ওপর বসল এবং তার পরেই কাঠের বাক্সটায়। সেখানে বসেই গর্তের ভেতর সেঁধিয়ে গেল। আমার ধারণা ঠিক। বাক্সয় ওদের বাচ্চা আছে।
যা বুঝলাম বাবা ও মা দুজনেই পোকা খাওয়াতে ব্যস্ত। বাবার চেয়ে মা বাসায় ঢুকতে অনেক বেশি সাবধানী। রাত্রে ওই ঘরে আর শুই নি কারন AC র আওয়াজে ওর ঘাবড়াতে পারে। কিন্তু গাছ গুলোয় জল বাবার কি হবে?
সাধারণ বুদ্ধি বলছে যে কিছু না জেনে এতদিন যে রুটিন চালিয়ে এসেছি তার মধ্যেই যখন ডিম্ পেড়ে, তা দিয়ে বাচ্চা তুলে তাকে বা তাদের খাওয়াতে বাবা মা ব্যস্ত তখন আজকে নতুন করে কিছু ভয় পেয়ে তারা বাসা ছেড়ে পালাবে না। কণাদও বলল যে বাচ্চা যখন হয়ে গেছে চট করে তাদের ছেড়ে বাবা মা পালাবে না। তাই আজ কয়েক সেকেন্ডের জন্য জানলা খুলে দুটো গাছে জল দিয়ে আবার বন্ধ করে দিয়েছি। তার খানিক পরে দেখলাম আবার বাপ খাবার নিয়ে গর্তের ভেতর সিধঁলো। তাই সব ঠিকই আছে। দেখি কত দিনে বাচ্চা গুলো বাসা থেকে বেরোয়।
প্রসঙ্গত, কণাদ গ্রামে মানুষ ও পাখি টাখি নিয়ে বড় হয়েছে। ওর ফিল্ড নলেজ প্রচুর। বাড়িতে অসংখ্য না না পাখির ডিমের কালেকশন আছে (ছেলে বয়সের দুষ্টমি)। এখন ডাক্তার নর্থ বেঙ্গলে। ও বলল বাচ্চা গুলো বড় হয়ে উড়ে যেতে হপ্তা দুয়েক লাগবে।
4th May, 2022
কালকে ঈদের দিন ছুটি ছিল তাই দোয়েল দম্পতিকে দেখলাম খানিকক্ষণ। বাবাটা দেখলাম কাঠবিড়ালি তাড়াচ্ছে। মাও নিশ্চই তাড়ায়। আমি দেখিনি। নিশিকান্ত সেদিন বলছিল যে কাঠবিড়ালি নাকি ডিম নষ্ট করে। আমি বিশ্বাস করি নি। আজকে বুঝলাম ঠিকই বলেছে। মেঠো লোক। এসব জানে।
আজকে ৪ঠা মে। আজকে সকালে বাবা ও মা দুজনকেই দেখলাম। তার মানে ছানারা ঠিকই আছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য জানলা খুলে জল দিচ্ছি। গাছ দুটো ঠিকই আছে।
5th May, 2022
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে নিই যে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা। আজকে দেখলাম মা দোয়েল একটা পোকা মুখে আম ডালে বসে আছে। অর্থাৎ সব ঠিকই আছে। পরে ঘষা কাঁচের পেছন থেকে দেখলাম বাবা দোয়েল বাসায় ঢুকছে। That means all is well .
6th May, 2022
আজ সকালে জানলা খুলে গাছে জল দিতে গিয়ে দেখি বাবাটি সামনে আম ডালে বসে অ্যালার্ম কল দিচ্ছে। হিস্ হিস্ করে একটা ডাক। রেকর্ড করতে পারলে ভালো হতো। সাপের মতো আওয়াজ। বুঝলাম সব ঠিকই আছে। পরে কাঁচের পেছন থেকে দেখলাম সেই বাবাই বাচ্চাদের বাইরে থেকে খাওয়াচ্ছে। অর্থাৎ কোটরে না ঢুকেই খাওয়াচ্ছে। বাচ্ছাদের কোনও ডাক এখনো শুনতে পাই নি।
মঙ্গলবার, ১০ই মে, ২০২২
গত দু দিনে কিছু ঘটনা প্রবাহ একসাথে হলো। লিখে রাখি পর পর। দুপুর বেলা পেছনের একতলা বাড়ির ওপরে আম গাছের যে ডাল গুলো আছে সেখানে আম গুলো পাড়তে লোক লাগানো হয়ে ছিল। তারা সারা দুপুর দাপিয়ে আম পাড়লো। আমিও দুপুরে ওই ঘরে AC চালিয়ে ঘুমোলাম কারণ রাত্রে মাম্পু আসবে আর ও ঘরে শোয়া হবে না। বিকেলে জানলার পেছন থেকে দেখলাম একটা চড়াই এসে বাক্সর ওপর বসতেই বাপ্ এসে তাকে তাড়ালো।
পরের দিন সোমবার সকালে খুব বৃষ্টি হলো। বাবা মা কে সারাদিন দেখা গেলো না। মনীষা বাড়ীতেই ছিল ও খেয়াল রেখেছিলো। আমিও একটু এল থাকতে থাকতেই ফায়ার এসে অনেক দেখলাম কিন্তু ওদের দেখা পেলাম না। পড়ন্ত আলোর সময় ডাক শুনতে পেলাম কিন্তু দেখা পেলাম না। জানলাটা খুললাম তাতেও কেউ এসে নজর রাখলো না।
আজ সকালে মা'র ঘর থেকে অনেক্ষন দেখার পর বাবা উড়ে এসে জানলার গ্রিলে বসলো এবং তার পর বাক্সয় গিয়ে গর্ত দিয়ে ভেতরে দেখে চলে গেল। আশে পাশে অসংখ্য কাঠবিড়ালি নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওরা কেউ কিছু বলছে না। আমি মা কেও দেখলাম নিচে পোকা ধরছে। একবার খাবার মুখে গর্তে ঢুকতে দেখলেই নিশ্চিন্ত হতাম।
বুধবার ১১ই মে, ২০২২
গত দুদিন ধরে দোয়েল বাবা মা কে সেরকম একটিভ দেখিনি বলে একটু চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু যেটা বুঝছিলাম ওরা, বিশেষত বাবা, বাসার কাছে কেউ এলে তাকে তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠছে। কিন্তু একবারও ঢুকে খাওয়াতে দেখিনি।
আজ সকালে একদম নিচে কয়েকটা মা দোয়েল দেখলাম খেতে ব্যস্ত। কিন্তু কাউকেই খাবার মুখে বাসায় উড়ে আসতে দেখলাম না। গাছে জল দেবার সময় জানলা খুলে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম বাবা দোয়েল চলে এলো। একটা কাক তার আগে এসেছিলো বাসার কাছে। বাবা দোয়েল তাকে চট করে তাড়ালো।
কিন্তু আমার মন বলছিলো বাসা টা একবার দেখা উচিত। শেষে আর থাকতে না পেরে সাইকেলের টর্চ টা নিয়ে গেলাম ও দেখলাম ভেতর টা। দেখলাম পরিপাটি করে সাজানো একটি বাসা। সরু সরু নারকোলের আঁশের মতো খয়েরি সুতো গোল করে দেওয়া। কিন্তু ছানারা কেউ নেই। অর্থাৎ তারা উড়ে গেছে। নিশ্চিন্ত হলাম। নিচে দেখা মা গুলো তার মানে বাচ্চা গুলোই। দুগ্গা দুগ্গা।
No comments:
Post a Comment